ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জীবনী

শ্রীকৃষ্ণ হলেন হিন্দু ধর্মের অন্যতম প্রধান দেবতা, যিনি বিষ্ণু অবতারের অষ্টম incarnation (অবতার) হিসেবে পরিচিত। তিনি মহাভারত, ভাগবত পুরাণ, এবং অন্যান্য হিন্দু ধর্মগ্রন্থে উল্লিখিত হয়েছেন। শ্রীকৃষ্ণের জীবনী অত্যন্ত বিস্তৃত এবং প্রভাবশালী। নিম্নে তাঁর জীবনী সংক্ষেপে বর্ণনা করা হল:

জন্ম ও শৈশব:

শ্রীকৃষ্ণের জন্ম মথুরা নগরীতে হয়েছিল। তিনি ছিলেন রাজা উগ্রসেনের পুত্র দেবকী এবং বাসুদেবের সন্তান। দেবকীর ভাই কংস ছিলেন অত্যাচারী রাজা, যিনি ভবিষ্যদ্বাণী শুনেছিলেন যে দেবকীর অষ্টম পুত্র তাকে হত্যা করবে। এই ভবিষ্যদ্বাণী রোধ করতে কংস দেবকী ও বাসুদেবকে কারাগারে বন্দী করে রাখেন এবং তাদের প্রতিটি সন্তানকে হত্যা করেন। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের জন্মের সময়, বাসুদেব তাঁকে গোকুলে নন্দ ও যশোদার কাছে রেখে আসেন, যেখানে তিনি পালিত হন।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম ও শৈশব

গোকুলে লীলা:

শ্রীকৃষ্ণের শৈশব গোকুলে কাটে, যেখানে তিনি নানা লীলা করেন। তিনি মাখন চুরি করা, গোপীদের সাথে রাসলীলা করা, এবং কালিয় নাগকে পরাজিত করার মতো অসংখ্য লীলার মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেন। তাঁর বাঁশির সুর গোপীদের মোহিত করত এবং তিনি প্রেম ও ভক্তির প্রতীক হয়ে ওঠেন।

কংস বধ:

শ্রীকৃষ্ণ যখন যৌবনে পদার্পণ করেন, তখন তিনি মথুরায় ফিরে আসেন এবং কংসকে হত্যা করেন। এর মাধ্যমে তিনি মথুরাবাসীদের অত্যাচার থেকে মুক্ত করেন এবং তাঁর পিতামাতা দেবকী ও বাসুদেবকে মুক্ত করেন।

মহাভারত ও গীতার উপদেশ:

শ্রীকৃষ্ণের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হল মহাভারতের কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে তাঁর ভূমিকা। তিনি অর্জুনের সারথি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং যুদ্ধের আগে অর্জুনকে ভগবদ্গীতার উপদেশ দেন। গীতায় তিনি কর্ম, জ্ঞান, ও ভক্তির পথের মাধ্যমে মোক্ষলাভের শিক্ষা দেন। তাঁর বাণী আজও মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে।

দ্বারকায় রাজত্ব:

শ্রীকৃষ্ণ দ্বারকা নগরী প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানে রাজত্ব করেন। তিনি রুক্মিণী, সত্যভামা, ও অন্যান্য অষ্ট মহিষীকে বিবাহ করেন। দ্বারকায় তিনি ধর্ম ও ন্যায়ের রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।

মৃত্যু ও মহাপ্রস্থান:

শ্রীকৃষ্ণের মৃত্যু একটি দুঃখজনক ঘটনা। একদিন তিনি একটি গাছের নিচে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, যখন একজন শিকারি তাকে হরিণ ভেবে তীর নিক্ষেপ করে। তীরটি শ্রীকৃষ্ণের পায়ে লাগে এবং তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর দ্বারকা সমুদ্রে ডুবে যায় এবং শ্রীকৃষ্ণের মহাপ্রস্থান ঘটে।

শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষা ও প্রভাব:

শ্রীকৃষ্ণের জীবন ও শিক্ষা হিন্দু ধর্মে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ভক্তিযোগ, কর্মযোগ, ও জ্ঞানযোগের মাধ্যমে মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতির পথ দেখিয়েছেন। তাঁর লীলা, গীতার উপদেশ, এবং জীবনদর্শন আজও মানুষের হৃদয়ে প্রেরণা জোগায়।